Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Title
স্টিভিয়া চাষ ও ব্যবহার
Details
স্টিভিয়া বহুবর্ষী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত উদ্ভিদটি ১-১.৫ মিটার লম্বা এবং পাতাগুলো ২-৩ সেমি.লম্বা হয়। ঔষধি গুণাগুন  এবং পাতা চিনি অপেক্ষা অধিক মিষ্টি হওয়ায় এ গাছটি সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে। শুকনা পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০-৪০ গুন এবং পাতার রস চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুন বেশি মিষ্ট।
স্টিভিয়ার ব্যবহার: আমাদের দেশে স্টিভিয়ার ব্যবহার খুবই সীমিত হলেও জাপান কানাডার মতো দেশে ডায়াটরি সাপলিমেন্ট ও মিষ্টিকারক হিসেবে জাপান ও কানাডায় প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ঔষধ গুণাগুণও রয়েছে। 
স্টিভিয়ার ব্যবহার -
১. স্টিভিয়া উচ্চ রক্তচাপ এবং ওবিসিটি এর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
২. জাপানিজরা খাদ্য সামগ্রী,সফট ড্রিংক এবং খাবার টেবিলে স্টিভিয়া ব্যবহার করে।
৩. এটি ডায়াবেটিক রোগী সেবন করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ুন্ত্রণ করে।
৪. চিকেন ফিডের সঙ্গে অল্প পরিমাণে স্টিভিয়ার পাতার গুঁড়া/পাউডার মিশালে মুরগির ডিমের খোসা ভাঙা ৭৫% হ্রাস পায় এবং কবুতর ফিডের সঙ্গে ২০% স্টিভিয়ার পাতার পাউডার মিশ্রিত করলে সিরাম ক্যালসিয়ামের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। এটি ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি খেলে দাঁতের ক্ষয়রোধ হয়। স্টিভিয়া স্কিন কেয়ার হিসেবে কাজ করে বিধায় ত্বকের কোমলতা এবং লাবণ্য বৃৃদ্ধি করে। চা,কফি,মিষ্টি,দই,বেকড ফুড,আইসক্রিম,কোমলপানীয় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
স্টিভিয়া বংশ বিস্তার ও উৎপাদন পদ্ধতি ঃ স্টিভিয়ার বংশ বিস্তার বেশ সমস্যাবহুল। অংকুরোদগম হার খুব কম (১০% এর নিচে)। ফলে বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় না। অঙ্গজ বংশ বিস্তার যেমন-স্টেম কাটিংয়ের ক্ষেত্রে শেকড় গজাতে বেশ সমস্যা দেখা যায়। স্টেম কাটিংয়ের গাছে ফুল তাড়াতাড়ি আসে। বীজের অংকুরোদগম হার কম হওয়ায় এবং স্টেম কাটিংয়ে সফলতা না থাকায় টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই সুবিধাজনক। স্টিভিয়া খাটো দিবস দৈর্ঘ্যরে উদ্ভিদ এবং ক্রান্তীয় দিবস দৈর্ঘ্য ১৩ ঘন্টা। সঠিকভাবে বৃদ্ধির জন্য ১৫-৩০ডিগ্রি সে: তাপমাত্রা দরকার এবং ভালো ফলনের জন্য রোপণ দুরত্ব ও সূর্যালোক গুরুত্বপূর্ণ।
টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি স্টিভিয়ার চারা মাঠে লাগানোর পূর্বে চারা হার্ডেনিং করতে হয়। চারা মাটির টবে লাগানোর জন্য অর্ধেক দো-আঁশ মাটি এবং অর্ধেক পচা গোবর ভালোভাবে মিশিয়ে রোদে শুকায়ে টবে মাটি ভর্তির পর স্টিভিয়ার চারা সাধারণভাবে রোপণ করা হয়। রোপণের পর টবের গাছে নিয়মিত হালকা পানি সেচ দিতে হয়। লাগানোর পরে গাছ যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। সারা বছর গাছে ফুল ফোটা সবচেয়ে বড় সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফেব্রুয়ারী ও সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করলে মাটির টবে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ২০০টির মতো পাতা পাওয়া যায়। চারটি মুড়ি ফসল সংগ্রহের পর পাতার আকার ছোট হয়। মুড়ি ফসলের  কুশি হতেও চারা তৈরি করা যায়।
মাঠে প্রায় সব ধরনের মাটিতে সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীস্মকালে চাষ করলে ফলন ভালো হয়। গ্রীস্ম মৌসুমে পানি নিস্কাশনের সুবিধাযুক্ত জমিতে স্টিভিয়ার চাষ করা হয়। দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি স্টিভিয়া চাষের অধিক উপযোগী। জমি খুব ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। মাটি ও জমির প্রকারভেদে ৪-৬টি চাষ ও মই দিতে হয়। টিস্যু কালচারের চারা হার্ডেনিং করার পর পলিব্যাগে দুই সপ্তাহ রেখে মাঠে রোপণ করতে হয়। সাধারণত ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে ৫০-৫৫ সেমি. দূরে দূরে (সারি-সারি,গাছ-গাছ) রোপণ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ১ লাখ চারার প্রয়োজন হয়। গাছটি প্রথমে খুব চিকন হয়ে ওঠে বিধায় মাঠে রোপণ করার সঙ্গে সঙ্গে খুঁটি দিয়ে হেলে পড়া হতে রক্ষা করতে হবে।এই গাছে খুব কম সার দরকার হয়। মাঠে বার বার হালকা সেচ দিতে হয়। এই ফসলের আগাছা দমন করা খুবই প্রয়োজন। আগাছার আধিক্যে ফলন কমে যায় এবং গাছের পরিচর্যা করতে গেলে গাছই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পোকামাকড়ের মধ্যে কার্টওয়ার্ম স্টিভিয়া গাছের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। ফসল সংগ্রহ,জাত ও রোপণ সময়ের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত মে-জুন এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের শেষে অথবা মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ ফুল ফোটা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফসল সংগ্রহ করতে হবে। সকাল বেলা পাতা সংগ্রহ করলে মিষ্টতা বেশি পাওয়া যায়। পাতা রোদে ২৫-৪৮ ঘন্টা শুকিয়ে নিতে হবে। শুকনা পাতা কাঁচের বোয়াম/বোতল,প্লাস্টিক পট ও টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা ভালো।
সারসংক্ষেপ ঃ জাপানের জনপণ প্রায় ৪০ বছর ধরে  স্টিভিয়া ব্যবহার করছে। মানবদেহে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বাংলাদেশে চিনির বিকল্প হিসেবে এবং ওষুধ শিল্পে স্টিভিয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। পৃথিবীর অনেক দেশই এর পাতা বিক্রি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। জাপান প্রতি বছর ৫০ টন স্টিভিওসাইডস ব্যবহার কওে, যার মূল্য ২২০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার। আমাদের দেশে এই দুর্লভ মিষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন গাছটির দ্রুত সম্প্রসারণ করা দরকার। আমাদেও দেশ গাছটির অর্থনৈতিক সফলতা ও ঔষধি গুণাগুণের ব্যবহার থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। কাজেই এর প্রসার ঘটানোর জন্য টিস্যুকালচারের মাধ্যমে চা উৎপাদন ও বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন মাঠ ও ল্যাবরেটরিতে গবেষণা জোরদারকরণ। যা ও মাধ্যমে স্টিভিয়ার উৎপাদন ও বহুমুখী ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ফলে আমাদেও দেশে চিনির বিকল্প হিসেবে স্টিভিয়ার ব্যবহারকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে এবং এক পর্যায়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
 
অর্পণা বড়ুয়া(এআইসিও)
কৃতসা, ঢাকা অঞ্চল।
 
 
 
 
 
 
 
Images
Attachments
Publish Date
30/11/2020
Archieve Date
27/04/2022