বানিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল উৎপাদন করেছেন দেলোয়ার ও সেলিনা দম্পতি
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও ফুল উৎপাদনের তালিকায় অনেকটা পিছিয়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই দেশে টিউলিপ ফুলের উৎপাদন বিস্ময় জাগিয়েছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে শীতকালের বাহারি টিউলিপ চাষে এসেছে সাফল্য। শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদন। গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্বখন্ড গ্রামে দেলোয়ার হোসেন ও সেলিনা হোসেন দম্পতির বিশাল বাগানে ফুটেছে ১২ জাতের ৭০ হাজার টিউলিপ।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি বাল্ব রোপণের পর ৩০ জানুয়ারি নাগাদ ২১ দিনের মাথায় ১ বিঘা জমিতে হাসছে টিউলিপের পাপড়ি। দেলোয়ার হোসেন ও সেলিনা ১৫ বছর ধরে ফুল ব্যবসায় জড়িত। ২০২০ সালে প্রথমবার ১০০০ টিউলিপ ফুলের বাল্ব রোপণ করে দেশজুড়ে সাড়া জাগিয়েছিলেন। প্রথম বছরে এই দম্পতির টিউলিপ বাগানের আয়তন ছিল মাত্র দুই শতাংশ। সফলতা পেয়ে এ বছর তাঁদের মোট ১ বিঘা জমিতে ৭০ হাজারের বেশি টিউলিপ ফুল চাষ করেছেন। নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের বাল্ব আমদানি করেন তাঁরা।টিউলিপ ও অন্যান্য ফুল-ফলের এই প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫ নারী ও পুরুষ। এর আগে দেলোয়ার-সেলিনা দম্পতি গোলাপ, জারবেরা, লিলিসহ বিভিন্ন জাতের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আসছিলেন। মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স নামে ফুল চাষের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তাঁরা। ওই প্রতিষ্ঠানের আওতায় ফুল ছাড়াও তাঁদের প্রকল্পে ছিল ব্যাপক পরিসরে স্ট্রবেরি ও জি-৯ কলার চাষ। ফুল ও ফল উৎপাদনের পাশাপাশি তাঁরা এগুলোর বীজ স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করেন।
সম্প্রতি টিউলিপ বাগানে সরেজমিনে দেখা যায়, বিশালাকারের বাগানটি বিশেষ ধরনের পর্দায় ঢাকা। একেক জাতের ও রঙের টিউলিপ আলাদা আলাদা বেডে লাগানো হয়েছে। মূল বাগানের পাশেই অন্য একটি শেডের নিচে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্লাস্টিকের পটে টিউলিপ ফুলের চারা প্রক্রিয়াজাত করছেন পাঁচ-ছয়জন কর্মী। পুরো বাগান ঘুরে ঘুরে দেখভাল করছিলেন দেলোয়ার এবং সেলিনা দম্পতি। বেশ কয়েকজন স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা এসেছেন বাগান থেকে টিউলিপ ফুল কিনতে। ফুলের খুচরা ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রির জন্য তিনি কিছু ফুল পাইকারি দরে কিনতে এসেছেন। এ বছর নতুন কিছু জাতের ফুল সংযোজন হয়েছে। টিউলিপ ফুলের ব্যাপক চাহিদা আছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
দেলোয়ার হোসেন সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টিউলিপ ফুল টবে সাজিয়ে রাখার জন্য আদর্শ ফুল। একটি গাছ থেকে একটিই ফুল পাওয়া যায়। টিউলিপ ফুলের গাছগুলো ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। টিউলিপ অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রতি যেমন সংবেদনশীল তেমনি গরমের সময় বাড়বাড়তি করানো কঠিন। সেজন্য টিউলিপ জন্মানোর জন্য গ্রিনহাউজ এবং পলি হাউজের ব্যবস্থা করতে হয়।
এ বছর পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদনে নেমেছেন দেলোয়ার দম্পতি। বাগান থেকে কেটে ফুল বিক্রির পাশাপাশি এ বছর পটে টিউলিপ বিক্রি করছেন তাঁরা। তিন থেকে পাঁচটি টিউলিপ গাছসহ পটের দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস এখন টিউলিপ ফুল রপ্তানি করছে। আমরা চেষ্টা করলে ব্যাপক হারে এই ফুল উৎপাদন করে রপ্তানির খাতায় নাম লেখাতে পারি।’ এর জন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ ও প্রকল্প সহায়তার।
উপ-পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জনাব সাইফুল ইসলাম জানান,আশা করা যায় দেলোয়ার দম্পতির উদ্যোগ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাবে।পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাবে।
#সংবাদদাতা:অপর্ণা বড়–য়া ,এআইসিও,কৃতসা ঢাকা।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS